আজ রবিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব: সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিলোসি ভুকেভিকের পদত্যাগ

admin
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ০৬:১১ অপরাহ্ণ
ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব: সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিলোসি ভুকেভিকের পদত্যাগ

Sharing is caring!

ডেস্ক রিপোর্ট : দীর্ঘদিন ধরে চলা ছাত্র আন্দোলনের পর সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিলোসি ভুকেভিক মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত দেশটির চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে, বলেন তিনি। তার পদত্যাগের ঘোষণা সার্বিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে আসে, যা বিশেষত রাজধানী বেলগ্রেডে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

গত ১৫ নভেম্বর সার্বিয়ার নোভি সাদ শহরের একটি রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৫ জন নিহত হন। এর পর থেকেই দেশজুড়ে ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করেন, অভিযোগ করে যে, রেলস্টেশন তৈরির সময় দুর্নীতি ঘটেছিল, যার ফলে এত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তারা দাবি করেন, দুর্নীতি না হলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো।

প্রধানমন্ত্রী ভুকেভিকের পদত্যাগের আগের দিন, দেশটির ছাত্ররা রাজধানী বেলগ্রেডের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে অংশ নেন। এতে যোগ দেন কৃষকরাও, এবং সড়ক অবরোধের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের চাপ তীব্র হতে থাকে।

পদত্যাগের ঘোষণা আসার পর, প্রধানমন্ত্রী ভুকেভিক বলেন, “এটি একটি অপরিবর্তনীয় সিদ্ধান্ত। দেশের পরিস্থিতি আরও জটিল না করতে এবং উত্তেজনা বাড়ানো থেকে বিরত রাখতে আমি পদত্যাগ করেছি।’’ তিনি আরও যোগ করেন যে, নতুন মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত তিনি এবং মন্ত্রীরা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।

এছাড়া, সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুকিক বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার পর সরকারে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন। তবে, ছাত্রদের অভিযোগ ছিল, তারা এখনও ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না, বিশেষত নোভি সাদ দুর্ঘটনাটি নিয়ে।

দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দেয় এবং তাদের পাশে দাঁড়ান বিচার বিভাগ, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। এই আন্দোলনটি সার্বিয়ার বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমর্থনও পেতে থাকে। গণতন্ত্রের পক্ষে ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা সার্বিয়ার মতো দেশে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা শুধু সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বরং সার্বিয়ার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নেয়।

প্রধানমন্ত্রী মিলোসি ভুকেভিক সার্বিয়ান প্রগ্রেসিভ পার্টির নেতা এবং সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি নোভি সাদ শহরের মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার প্রধানমন্ত্রিত্ব শুরু হয়েছিল এক বছরেরও কম সময় আগে, তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তাকে পদত্যাগ করতে হলো।

এটি একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ের সাক্ষী, যেখানে ছাত্র আন্দোলন সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সমালোচনা এবং জনগণের ক্ষোভের প্রতিফলন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সার্বিয়ার সরকারের নীতির প্রতি ছাত্রদের প্রতিরোধ আগামী দিনের রাজনৈতিক চিত্রকে নতুন দিকে পরিচালিত করতে পারে।

সার্বিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা এখনো অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরও দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকায়, দেশটি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়ে গেছে।

Sharing is caring!