আজ শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুর্দি বিদ্রোহীদের একীভূত করল সিরিয়া

admin
প্রকাশিত মার্চ ১১, ২০২৫, ০৭:৫৯ অপরাহ্ণ
কুর্দি বিদ্রোহীদের একীভূত করল সিরিয়া

Sharing is caring!

ডেস্ক রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসকে (এসডিএফ) সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা সোমবার (১০ মার্চ) এ ঘোষণা দেন। শারা এবং এসডিএফের প্রধান মাজলুম আবদির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। এ চুক্তিতে সিরিয়ার ঐক্যের ওপর জোর দেয়া হয়েছে এবং শর্ত দেয়া হয়েছে যে ‘উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার সকল বেসামরিক ও সামরিক প্রতিষ্ঠান- সীমান্ত ক্রসিং, বিমানবন্দর এবং তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র’ সিরিয়া প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এসডিএফ ২০১৫ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে, অঞ্চলটি সিরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসবে।

এর আগে আল-শারা সম্প্রতি দেশটির শিয়া মুসলিম সম্প্রদায় আলভীদের ওপর চালানো হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করেছেন, এ ধরনের সহিংসতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টাকে হুমকির মুখে ফেলছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো কোনো বৈশ্বিক সংবাদ সংস্থার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আল-শারা রয়টার্সকে জানান, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে মিত্রদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। শারা বলেন, ‘সিরিয়া আইনের শাসনের দেশ। আইন সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগ হবে।’

দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমরা নিপীড়িতদের রক্ষার জন্য লড়াই করেছি, তাই আমরা কোনো রক্ত অন্যায়ভাবে ঝরতে দেব না, বরং দোষীদের অবশ্যই শাস্তির সম্মুখীন হতে হবেÑতারা আমাদের ঘনিষ্ঠ হলেও।’ আল-শারা জানান, সাম্প্রতিক সংঘাতে নিরাপত্তা বাহিনীর ২০০ সদস্য নিহত হয়েছেন। তবে তিনি মোট মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, একটি স্বাধীন কমিটি তদন্ত করে আনুষ্ঠানিক সংখ্যা জানাবে। সংকট মোকাবিলায় আল-শারা একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন, যা ৩০ দিনের মধ্যে হত্যাকা-ের তদন্ত করবে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি, দ্বিতীয় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে নাগরিক শান্তি ও পুনর্মিলন প্রচারের জন্য।

তবে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সংখ্যালঘু আলভী সম্প্রদায়ের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সাম্প্রতিক হত্যাকা-ের ফলে বৃহস্পতিবার থেকে চলা সহিংসতায় মোট নিহত ১ হাজার ১৮ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ১২৫ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত বলে দাবি করা ১৪৮ জন যোদ্ধা রয়েছেন।

আল-শারা স্বীকার করেন, সাম্প্রতিক রক্তপাত জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের পথকে প্রভাবিত করবে।’ তবে পরিস্থিতি যতটা সম্ভব সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘রক্তপাত কেবলই আরও রক্তপাতের জন্ম দেয়।’ এ সময় তিনি সাম্প্রদায়িক বিভাজন রোধের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এ হত্যাকাণ্ডে বিদেশি যোদ্ধারা বা তার নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী জড়িত ছিল কি নাÑজানতে চাইলে শারা বলেন, তদন্তেই এসব প্রশ্নের উত্তর আসবে। তবে তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত গোষ্ঠী এবং বিদেশি হস্তক্ষেপকে এই সহিংসতার জন্য দায়ী করেন।

আল-শারা অভিযোগ করেন, আসাদপন্থী চতুর্থ ডিভিশনের সদস্যরাই গত বৃহস্পতিবার সংঘাতকে ইচ্ছাকৃতভাবে উসকে দিয়েছে। এই চতুর্থ ডিভিশন সাবেক প্রেসিডেন্টের ভাই মাহের আল-আসাদের নেতৃত্বে ছিল। তিনি আরও দাবি করেন, এক অজ্ঞাত বিদেশি শক্তি পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করেছে। তিনি কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করেই বলেন, ‘তাদের উদ্দেশ্য ছিল অস্থিরতা তৈরি করা ও সাম্প্রদায়িক বিভেদ উসকে দেওয়া।’

সাক্ষাৎকারে আল-শারা সিরিয়ার অস্থিতিশীলতার জন্য বিদেশি নিষেধাজ্ঞাকেও দায়ী করেন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা থাকলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে। এ ছাড়া, কূটনৈতিক আলোচনা জরুরি হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয়নি বলে নিশ্চিত করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সিরিয়ার বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। এটি তাদের কাছে জানতে চান। সিরিয়ার দরজা খোলা। সূত্র : রয়টার্স।

Sharing is caring!