আজ শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সীমান্তবর্তী তিব্বতি মঠগুলির শিক্ষা কার্যক্রম ঢেলে সাজাচ্ছে ভারত

admin
প্রকাশিত এপ্রিল ৮, ২০২৫, ০৪:৪৮ অপরাহ্ণ
সীমান্তবর্তী তিব্বতি মঠগুলির শিক্ষা কার্যক্রম ঢেলে সাজাচ্ছে ভারত

Sharing is caring!

ডেস্ক রিপোর্ট :  ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলে রাজনৈতিক, সামরিক এবং বাণিজ্যিক সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে, ভারত এখন তিব্বতিদের শিক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি, ভারত তিব্বতি বৌদ্ধ মঠগুলোর শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চলেছে, যার লক্ষ্য চীনের প্রভাব কমিয়ে ভারতীয় জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করা।

ভারতীয় সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভারতের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত প্রাচীন বৌদ্ধ মঠগুলোর শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক এবং ভারতের জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হচ্ছে। সিকিম, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর ৬০০ মঠে চীনের প্রভাব মুক্ত নতুন পাঠ্যক্রম চালু করা হচ্ছে। এই মঠগুলোতে বৌদ্ধ ঐতিহ্য, ধর্মীয় শিক্ষা এবং আধুনিক বিষয় যেমন গণিত, বিজ্ঞান, কম্পিউটার এবং ইংরেজি শেখানো হয়, তবে এখন পর্যন্ত ব্যবহৃত পাঠ্যক্রম ভারতীয় জাতীয় পরিচয়ের সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।

ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বৌদ্ধ কর্মী মালিং গোম্বু জানান, “আমরা বৌদ্ধধর্মের শিক্ষার পাশাপাশি ভারতীয় জাতীয় পরিচয়ে শিক্ষিত করার চেষ্টা করছি, যাতে চীন হিমালয়ের মঠগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।” তিনি আরও বলেন, “ভারত কর্তৃক স্বীকৃত এবং সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত শিক্ষা মঠগুলোর ছাত্রদের দেওয়া প্রয়োজন।”

এছাড়া, অরুণাচল প্রদেশের মঠগুলোতে নতুন পাঠ্যক্রম গ্রহণের জন্য আলোচনা চলমান রয়েছে। ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এবং বৌদ্ধ পণ্ডিতরা মঠগুলোর জন্য নতুন পাঠ্যপুস্তক তৈরি করেছেন। এ বইগুলোতে ভারতের আধুনিক ও প্রাচীন ইতিহাস, তিব্বতের স্বাধীনতাসংগ্রামে তাদের ভূমিকা এবং ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ভারতীয় বৌদ্ধ ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে তিব্বতি ছাত্রদের ভারতের সাথে সম্পর্কিত কার্যকরী শিক্ষা দেওয়া হবে।

ভারতের মন্ত্রিসভা এই শিক্ষাপরিকল্পনাটি একটি বৃহত্তর কৌশলগত লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে, যার উদ্দেশ্য চীনের প্রভাব থেকে তিব্বতি মঠগুলোকে মুক্ত রাখা। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এই পরিকল্পনা সীমান্ত অঞ্চলের মঠগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমে চীনের প্রভাব কমিয়ে ভারতীয় জাতীয়তার ভিত্তি শক্তিশালী করবে। ২০২০ সালে সীমান্তে সংঘর্ষের পর ভারত এবং চীন সামরিক অচলাবস্থা দূর করতে কাজ করছে, তবে সীমান্ত অঞ্চলের উন্নয়ন এবং নিরাপত্তায় ভারতের আরও বৃহত্তর ব্যয়ের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

নতুন পাঠ্যক্রমের মধ্যে ছাত্রদের শুধু ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক বিষয়ে দক্ষতা অর্জনেও মনোযোগ দেওয়া হবে। সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীদের জন্য পাঠ্যক্রম এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে তারা ধর্মীয় প্রচারক হওয়ার পাশাপাশি আধুনিক কর্মক্ষেত্রে সঠিকভাবে নিজেদের ভূমিকা রাখতে পারে। তিব্বতিরা এখানে বসবাস করলেও, তাদের জন্য ভারতের সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং জাতীয় পরিচয়ে ধারণার ভিত্তিতে শিক্ষা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ ব্যাপারে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, সীমান্তবর্তী কৌশলগত এলাকাগুলোর মঠগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা এই বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। তবে, সরকারের এই নতুন পদক্ষেপ কিছু মঠের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে। কিছু মঠের সন্ন্যাসীরা জানিয়েছেন, এই নতুন পাঠ্যক্রমের প্রবর্তন তাদের প্রথাকে ভেঙে ফেলবে, যা তারা পছন্দ করছেন না।

Sharing is caring!