Sharing is caring!
ডেস্ক রিপোর্ট: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বলেছেন, হামাসকে ১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুরের মধ্যে গাজায় আটকে রাখা সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, না হলে তিনি ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতি বাতিল করার প্রস্তাব দেবেন এবং জায়গাটি ‘জাহান্নামে’ পরিণত হবে।
ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, ইসরাইল এই বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করতে পারে এবং তিনি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে পারেন। তবে ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক বিস্তৃত আলোচনায় ট্রাম্প মুক্তি পাওয়া শেষ দলের বন্দীদের অবস্থা এবং হামাসের ঘোষণায় হতাশা প্রকাশ করেন। হামাস বন্দী মুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যতটুকু আমি মনে করি, যদি শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সমস্ত বন্দী ফেরত পাঠানো না হয়, আমি মনে করি সেটাই সঠিক সময়। আমি বলব, এটি (যুদ্ধবিরতি চুক্তি) বাতিল করুন এবং সব কিছু উল্টে যাবে, দুঃখজনক পরিস্থিতি তৈরি হবে। আমি বলব, শনিবার ১২টার মধ্যে তাদের ফেরত পাঠানো উচিত।’
তিনি জানিয়েছেন, তিনি চান বন্দিরা ধাপে ধাপে নয়, একসাথে মুক্তি পাক। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা তাদের সবাইকে ফেরত চাই।’ ট্রাম্প আরও বলেছেন, যদি জর্ডান এবং মিশর গাজা থেকে স্থানান্তরিত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের গ্রহণ না করে, তাহলে তিনি তাদের সাহায্য স্থগিত করতে পারেন। মঙ্গলবার তিনি জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ-এর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। তিনি আরও বলেছেন, তার গাজা অধিগ্রহণ পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের জন্য ফেরত আসার কোনো অধিকার থাকবেন না। তবে তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, গাজার মানুষদের শুধু সাময়িকভাবে স্থানান্তরিত করা হবে।
ফক্স নিউজ চ্যানেলের ব্রেট বায়ারের সাথে সোমবার প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করা নিয়ে জর্ডান এবং মিশরের সাথে চুক্তি করার সম্ভাবনার কথা জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা প্রতি বছর এই দুই দেশকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেয়।’ ফিলিস্তিনিদের গাজায় ফিরে আসার অধিকার থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বায়ারের কাছে বলেন, ‘না, তাদের থাকবে না, কারণ তারা আরও ভালো আবাসন পাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাদের জন্য একটি স্থায়ী জায়গা নির্মাণের কথা বলছি, কারণ এখন ফিরতে হলে তাদের বছরের পর বছর সময় লেগে যাবে। এটা (গাজা) বসবাসযোগ্য নয়।’ ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠকের পর গাজার ২২ লাখ ফিলিস্তিনিকে পুনর্বাসিত করার এবং গাজা উপকূলীয় এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তা ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ হিসেবে পুনর্নির্মাণ করার প্রস্তাব দেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের প্রস্তাব নাকচ করেছে আরব দেশগুলো : ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে উৎখাত করা এবং উপত্যকাটির নিয়ন্ত্রণ নেয়া-বিষয়ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব নাকচ করেছে আরব দেশগুলো। তারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করছে। মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে এ কথা বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াশিংটনে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই কথা জানায়। বৈঠকে গাজা পুনর্গঠনের গতি বাড়ানোর গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি। তিনি বৈঠকে মার্কো রুবিওকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ‘ব্যাপক এবং ন্যায়সংগত শান্তি ও স্থিতিশীলতা’ অর্জন করতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী তার দেশ। ফিলিস্তিনিরা গাজাসহ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাই উপত্যকাটি থেকে তাদের সরে যেতে বলার যে কোনো ধরনের পরামর্শ ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের জন্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। আরব দেশগুলো এই ধরনের পরামর্শ ২০২৩ সালে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান ‘ঐতিহাসিক অন্যায়ের’ বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং তাদের ‘বৈধ ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার’ পুনরুদ্ধারে কাজ করা। ট্রাম্প সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার গাজা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনার অধীনে ফিলিস্তিনিদের উপত্যকাটিতে ফেরার কোনো অধিকার থাকবে না। ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্বব্যাপী নিন্দা হচ্ছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নেতারা বলেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে। সূত্র : রয়টার্স, ডেইলি বিস্ট।
Sharing is caring!